SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - রসায়ন - খনিজ সম্পদ: ধাতু অধাতু | NCTB BOOK

লোহা বা লোহার সংকর ধাতুর তৈরি জিনিসপত্র জানালার গ্রিল, আলমিরা ইত্যাদি খোলা জায়গা বা বাতাসে দীর্ঘদিন থাকলে এসব জিনিসপত্রের উপর লালচে বাদামি বর্ণের এক ধরনের পদার্থ তৈরি হয়। এই বাদামি পদার্থকে লোহার মরিচা বলা হয়। মরিচা তৈরির মাধ্যমে লোহা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। বিশুদ্ধ কপার বা পিতল বা কাঁসার তৈরি জিনিসপত্র দীর্ঘদিন বাতাসে থাকার ফলে এদের উপর কালো বা বাদামি বা সবুজ বর্ণের একটি আস্তরণ পড়ে। এই আস্তরণকে কপারের তাম্রমল বলা হয়। তাম্রমল তৈরির মাধ্যমে তামা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
 

সাধারণত বিশুদ্ধ ধাতু বা সংকর ধাতু দীর্ঘদিন বাতাসে থাকার ফলে ধাতু বা সংকর ধাতুর উপর ভিন্ন বর্ণযুক্ত একটি নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়াকে ধাতুর ক্ষয় বলে।
 

লোহা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে লালচে বাদামি বর্ণের মরিচা তৈরি হয় সেটি হলো আর্দ্র ফেরিক অক্সাইড (Fe2O3.nH2O)। আবার বিভিন্ন বর্ণের তাম্রমলে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ উপস্থিত থাকে। যেমন—কোনো কোনো তাম্রমলে কিউপ্রাস অক্সাইড (Cu2O) উপস্থিত থাকে। কোনো কোনো তাম্রমলে কিউপ্রাস সালফাইড বা চালকোসাইট (Cu2S) উপস্থিত থাকে। তাম্রমলকে কোনো নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংকেতে প্রকাশ করা যায় না। কারণ তাম্রমলের সব জায়গায় একই ধরনের পদার্থ তৈরি হয় না। সাধারণত কোনো কোনো ধাতু বা সংকর ধাতু যখন বায়ুমণ্ডলে থাকে তখন ধাতুসমূহ ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয়। এখানে একটি জারণ বিক্রিয়া হয়। আবার, ধাতু যে ইলেকট্রন ত্যাগ করে বায়ুমণ্ডলের কোনো উপাদান সেই ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয়। এখানে একটি বিজারণ বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। অতঃপর ধনাত্মক আয়ন এবং ঋণাত্মক আয়নের মধ্যে বিক্রিয়ায় একটি যৌগ তৈরি হয়। নতুন যৌগটি রুপান্তরিত হয়ে বা অন্যান্য যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে। এভাবে ধাতু বা সংকর ধাতু ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

লোহার উপর মরিচা পড়ার বিক্রিয়া অনেক ধীরে সংঘটিত হয় এবং অনেকগুলো ধাপে সংঘটিত হয়। এ সকল ধাপসমূহের মধ্যে একটি ধাপে জারণ বিক্রিয়া এবং একটি ধাপে বিজারণ বিক্রিয়া সংঘটিত হয়৷ এজন্য লোহায় মরিচা পড়ার বিক্রিয়াটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া। লোহার মরিচা পড়ার জন্য বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন (O2) এবং পানির (H2O) প্রয়োজন হয়। বায়ুমণ্ডলের পানি কিছুটা বিয়োজিত হয়ে H+ ও OH- তৈরি করে।

 

ধাতু ক্ষয়রোধের উপায়
ধাতু বা সংকর ধাতু যদি বাতাসের অক্সিজেন এবং পানির সংস্পর্শে না আসে তবে ধাতু ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। এটি বিভিন্নভাবে করা যায়, যেমন (i) রং করে (ii) ইলেকট্রোপ্লেটিং ও (iii) গ্যালভানাইজিং করে ইত্যাদি। তোমরা বাড়িতে লোহার তৈরি দরজা-জানালা রং কর যেন লোহা বাতাসের অক্সিজেন এবং পানির সংস্পর্শে না আসে। আমরা জানি কম সক্রিয় ধাতু সাধারণত বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে না। কিন্তু বেশি সক্রিয় ধাতু বাতাসের অক্সিজেন এবং পানির সাথে দ্রুত বিক্রিয়া করে। অতএব, বেশি সক্রিয় ধাতুর ক্ষয় হওয়া থেকে ধাতুকে রক্ষা করার জন্য বেশি সক্রিয় ধাতুর উপর কম সক্রিয় ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়। এভাবে বেশি সক্রিয় ধাতুকে ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়। একটি অধিক সক্রিয় ধাতুর উপর কম সক্রিয় ধাতুর প্রলেপ দুইভাবে দেওয়া যার যথা— ইলেকট্রোপ্লেটিং ও গ্যালভানাইজিং।

ইলেকট্রোপ্লেটিং (Electroplating)
সাধারণত তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে একটি ধাতুর উপর আরেকটি ধাতুর প্রলেপ দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ইলেকট্রোপ্লেটিং। এক্ষেত্রে যে ধাতুর প্রলেপ দিতে হবে তাকে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত করা হয়। যে ধাতুর উপর প্রলেপ দিতে হবে তাকে ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত করা হয়৷ এরপর তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতির মাধ্যমে ইলেকট্রোপ্লেটিং করা হয়। যেমন— লোহার উপর কপার ধাতুর প্রলেপ দেওয়ার জন্য CuSO4 এর একটি দ্রবণ নেওয়া হয় এবং কপার দণ্ডকে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তের সাথে এবং লোহা দণ্ডকে ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত করে দ্রবণে তড়িৎ প্রবাহিত করা হয়। তড়িৎ প্রবাহকালে Cu দণ্ডের কপার 2টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Cu2+ হিসেবে দ্রবণে চলে যায়

Cu        Cu2+ + 2e- [জারণ বিক্রিয়া]
 

এবার এই Cu2+ দ্রবণের মধ্য দিয়ে Fe দণ্ড থেকে 2টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cu এ পরিণত হয় এবং Fe দণ্ডের উপর লেগে যায়।
 

Cu2+ + 2e-      Cu [বিজারণ বিক্রিয়া]
 

গ্যালভানাইজিং (Galvanizing): যেকোনো ধাতুর উপর জিংকের প্রলেপ দেওয়াকে গ্যালভানাইজিং বলে। এক্ষেত্রে তড়িৎ বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। কোনো ধাতুর উপর যেকোনোভাবে জিংকের প্রলেপ দিয়ে গ্যালভানাইজিং করা হয়।

 

ধাতু পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ (Recycling of Metals)
পৃথিবীতে প্রতিটি মৌলিক পদার্থ বা ধাতুর পরিমাণ নির্দিষ্ট। কোনো ধাতুর তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সেটা ফেলে না দিয়ে সেটাকে সংগ্রহ করে ঐ ধাতু তৈরির কারখানায় সেগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঐ পরিত্যক্ত ধাতু থেকে ব্যবহার উপযোগী ধাতু তৈরি করা হয়। পরিত্যক্ত ধাতু থেকে আবার ব্যবহার উপযোগী ধাতুতে পরিণত করার পদ্ধতিকে ধাতু পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বলে। যেমন—পরিত্যক্ত আলুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিলকে অ্যালুমিনিয়াম তৈরির কারখানায় প্রেরণ করে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। পরিত্যক্ত লোহাকে লোহা তৈরির কারখানায় প্রেরণ করে লোহা ধাতু পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। আমেরিকায় যে কপার ব্যবহৃত হয় সেই কপারের প্রায় 21% কপার পুনঃপ্রক্রিয়াজাত এর মাধ্যমে তৈরি করে। ইউরোপে যে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহৃত হয় সেই অ্যালুমিনিয়ামের 60% অ্যালুমিনিয়াম পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তৈরি হয়।

Content added By
Promotion